Recent Post

আয়নাবন্দি(২য় পর্ব): জিৎ সরকার

আয়নাবন্দি(২য় পর্ব): জিৎ সরকার
আয়নাবন্দি(২য় পর্ব): জিৎ সরকার
(আগের পর্বটি পড়ুন)

এখন সে দাঁড়িয়ে আছে আন্দরমহলের শান বাঁধানো উঠানে। তবে সবটা শান বাঁধানো এমনটা নয়। এই উঠানের একটা দিকে আরেকটা বাগান আছে। দেখে বোঝা যায় এটা কোনো একসময় ফুলের বাগান ছিল।  এখনও বর্তমানের আগাছার সাথে যুঝে পুরনো দিনের শোভার ফসিল হিসাবে কয়েকটা ফুলের গাছ উঁকি দিচ্ছে সেখানে থেকে। বাগানের ঠিক মাঝখানে একটা মাঝারি চৌবাচ্চা। তার কালো জল এই মুহূর্তে এই বাড়ির নৈঃশব্দের মতোই থমকে আছে। 
তনয়ার ঠিক পেছনে বাহির মহল পেরিয়ে আসতে হয় এখানে অর্থাৎ অন্দরমহলে।  অন্দরমহলে পেরিয়ে বাড়ির পেছনের দিকে রয়েছে একটা মন্দির। সেটাও আকারে বেশ বড়। এখনও সে মন্দিরে দুর্গাপূজা হয়।  সেই একটা দিন বাড়ির দরজা সবার জন্য খোলা হয়। কিন্তু এখন কেউ আর আসে বলে মনে হয় না।
সামনের দোতলা ইমারত আর তার চারপাশের পরিবেশ দেখতে দেখতে কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল তনয়া। সম্বিত ফিরল একটা হাতের স্পর্শে। প্রথমটায় চকমকে উঠেছিল সে। তারপর পেছনে ঘুরে দেখে একজন‌ বৃদ্ধ মানুষ কখন যেন ঠিক তার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু তনয়া এতটাই আনমনা ছিল যে লক্ষ্যই করেনি।  বৃদ্ধের মুখের অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট প্রশ্নের ছাপ লক্ষ্য করেই তনয়া নিজের পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করল—
“কেমন আছো মানুদাদু? চিনতে পারছ আমায়? আমি…”
কিন্তু তনয়া তার নিজের নাম সম্পূর্ণ দেওয়ার আগেই বৃদ্ধ বলে উঠল, “তনু দিদিমনি?” 
তার গলার স্বরে প্রশ্নের আভাস স্পষ্ট।
কতকটা অবাক হয়েই তনয়া যেন বলে, “চিনতে পেরেছো তবে!”

এই বৃদ্ধের নাম মানচন্দ্র ভট্টাচার্য। প্রায় পুরুষানুক্রমে এই বাড়ির মন্দিরে ‌পুজো-আচ্চা করে আসছে এদের বংশ।  তনয়ার দাদুর বাবা যখন এই বাড়ির বাস এক্কেবারে উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তখন এই বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ এর দায়িত্ব দিয়ে যান এদের বংশের উপরেই। বদলে মাসে একটা পারিশ্রমিকের ব্যবস্থাও করেন।   সেই থেকে এমনটাই চলে আসছে।  
তনয়ার সাথে তার মানুদাদুর শেষ দেখা হয় বছর পনেরো আগে। সেদিন সে মাত্র একবেলার জন্য এই বাড়িতে এসেছিল।  তনয়া এখানে আসার আগে কথায় কথায় তার মায়ের কাছে থেকে সব হালহাকিকত জেনেই এসেছে। তাই তার পক্ষে বৃদ্ধের নাম আন্দাজ করে নেওয়া তেমন কিছু শক্ত নয় কিন্তু সে অবাক হয়েছে এটা দেখে যে মাত্র একবেলার পরিচয়ে বৃদ্ধ তাকে চিনতে পেরেছে এটাই নয়—তার ডাক নামটাও মনে রেখেছে। 

তবে তনয়ার মুখের মতো বিস্ময়ের একটা অভিব্যক্তি খেলা করছে বৃদ্ধের মুখেও।  সে জিজ্ঞেস করে, “তুমি এখন এখানে? সাথে কে এসেছে?”
বৃদ্ধের বিস্ময়ের মাত্রা আরেকটু চড়িয়ে দিয়ে তনয়া ধীরে সুস্থে বলে ওঠে, “একাই এসেছি। আর কেউ তো নেই।”
বৃদ্ধের চোখে এবার সন্দেহের ছায়া পড়ে, “বাড়িতে বলে এসেছ?”

(ক্রমশ)

Author

  • জিৎ সরকার

    নবতরু ই-পত্রিকার একদম জন্মলগ্ন থেকে নিয়মিত লেখালেখির সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন তাঁদের মধ্যে লেখক জিৎ সরকার অন্যতম। ১৯৯৭ সালে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এরপর বাল্যকাল এবং বড়ো হয়ে ওঠা নদীয়ার করিমপুরে। স্থানীয় করিমপুর জগন্নাথ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হয়ে কৃষ্ণনাথ কলেজে জীববিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে করিমপুরেই থাকেন পেশায় ও নেশায় ছাত্র জিৎ সরকার। একই সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন লেখালেখির কাজও। জীববিদ্যাতে প্রথমশ্রেণিতে স্নাতক জিৎ সরকারের শখ প্রধানত লেখালেখি করা তছাড়াও বই পড়া, গান শোনা সিনেমা দেখা, রান্না করা, পুরোনো ইতিহাস ঘাটাঘাটি করা প্রভৃতিতেও উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। তাঁর লেখালেখির জীবন শুরু কবিতা দিয়ে। তারপরেও কিছু কবিতা লেখা হয়েছে। তার মধ্যে কিছু সোস্যাল মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে। দুটি কবিতা দুটি ওয়েব ম্যাগাজিনেও প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখি চলছে সমান তালে। এছাড়া ছবি আঁকা, ক্রিমিনোলজি সর্ম্পকে ধারনা প্রভৃতি বিষয়েও বিশেষ দক্ষ তিনি। তীক্ষ্ণ স্মৃতিধর জিৎ সরকারের লেখায় বুদ্ধিদীপ্তের ছাপ পরে লেখার পরতে পরতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

একটা বাঘের গল্প: অহনা মুখোপাধ্যায়
গদ্য- সাহিত্য গল্প ছোটো গল্প

একটা বাঘের গল্প: অহনা মুখোপাধ্যায়

    একটা গ্রামে একটা জঙ্গল ছিল। সেখানে একটা বাঘ ছিল। সেই জঙ্গলে রাত্রিবেলায় যাওয়া যেত না। গ্রামের লোকেরা সেখানে যেতে খুব ভয় পেত। তাই তারা সেই বনের দিক দিয়ে কেউ যেত না।

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার (১/১২ পর্ব)
    গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

    আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার

      গাড়িটা যখন বড়ো গেটের সামনে এসে দাঁড়াল তখন শেষ বিকেলের সূর্য পশ্চিমাকাশে রক্তাভা ছড়িয়ে সেদিনকার মতো সন্ধ্যেকে আলিঙ্গন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      শৈশবের গরমকাল: ঈশিতা পাল
      গদ্য- সাহিত্য স্মৃতিকথা

      শৈশবের গরমকাল: ঈশিতা পাল

        আমার শৈশব ভাড়াবাড়িতে। তাই গরমের ছুটিতে কাকু, জেঠুদের বাড়ি টানা একমাস ছুটি কাটাতে যেতাম। মামাবাড়িও যেতাম। ছেলেবেলার গরমকাল জুড়ে বেশ কিছু মজার স্মৃতি আছে

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন