Recent Post

আমার স্মৃতিতে বাড়ির দুর্গাপূজা(২য় পর্ব): রুদ্র কুমার মুখোপাধ্যায়

আমার স্মৃতিতে বাড়ির দুর্গাপূজা(২য় পর্ব): রুদ্র কুমার মুখোপাধ্যায়

(১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন)

যদুনাথের তিন পুত্র বিনয়ভূষণ, শশীভূষণ ও বিভূতিভূষণ। বিনয়ভূষণ রেলের কর্মচারী ছিলেন। তিনি আসামের ধুবড়িতে কর্মরত ছিলেন বলে আমরা তাঁকে “ধুবড়ির দাদু” বলে ডাকতাম। প্রসঙ্গত, সেই সময় জায়গার নাম দিয়ে মানুষকে সম্বোধন করার প্রচলন ছিল। বিনয়ভূষণের দুই পুত্র ছিলেন ধ্বজাধারী ও চারুচন্দ্র। এঁরা দুজনেই কর্মসূত্রে কলকাতায় বসবাস শুরু করেন ও ক্রমে তাদের পরিবারও কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়। ধ্বজাধারী ছিলেন রেল এর কর্মচারী এবং চারুচন্দ্র ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। ধ্বজাধারীর জ্যেষ্ঠপুত্র সুকুমার মুখোপাধ্যায় ওরফে লালদা একজন বর্ষীয়ান প্রথিতযশা চিকিৎসক। তাঁর আর দুই পুত্র শ্রীকুমার ওরফে পীতুদা এবং দেবকুমার ওরফে শঙ্করদা যথাক্রমে অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার ও ব্যাঙ্ক কর্মী। চারুচন্দ্রের দুই পুত্র রঞ্জন ওরফে নীলদা(অবসরপ্রাপ্ত চাকুরিজীবী) এবং সজন ওরফে সবুজদা(বর্তমানে প্রয়াত)। শশীভূষণের দুই পুত্র ছিলেন ভূধরচন্দ্র ও পূর্ণচন্দ্র। ভূধরচন্দ্র কন্ট্রাক্টারীর কাজ করতেন। ভূধরচন্দ্রের পরিবারও কলকাতায় চলে যান। তাঁর একমাত্র পুত্র নির্মল ওরফে ‘বড়দা’-র তিন কন্যা। তিনি রেল এর কর্মী ছিলেন। বড়দার এক দৌহিত্রী দেবারতি চট্টোপাধ্যায় বর্তমানে আমেরিকায় নাসায় কর্মরত। পূর্ণচন্দ্র ছিলেন বিশ্বভারতীর কর্মী। পূর্ণচন্দ্রের বংশধরেরা আজও সুরুল এবং বোলপুরে বসবাস করছেন। পূর্ণচন্দ্রের প্রথম স্ত্রী এক পুত্র ও দুই কন্যাকে রেখে গত হলে তিনি আবার বিবাহ করেন। জ্যেষ্ঠপুত্র তুষারকান্তি যদিও জামশেদপুরে থাকেন কিন্তু ওনার অপর দুই পুত্র শিশির ও নীহার সপরিবারে বোলপুরেই বর্তমান। বিভূতিভূষণ ছিলেন সন্তানহীন। বিভূতিভূষণের স্ত্রীর পিত্রালয় ছিল হেতমপুর তাই বাবা ওনাকে ‘হেতমপুরের খুড়িমা’ এবং আমরা ‘হেতমপুরের দিদা’ বলতাম। এঁনাকেও আমি ছোটবেলায় দেখেছি। ইনি একটু শুচিবায়ুগ্রস্ত মানুষ ছিলেন বলে আমরা ছোটোরা তাঁকে মাঝেমাঝেই উপদ্রব করে মজা পেতাম। 

            (সপরিবারে আমার বাবা— শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায়, ১৯৮৩ সাল)

 আগেই উল্লেখ করেছি রামশরণের দুই পুত্রের কথা। যেখান থেকে বংশের শাখা প্রশাখা শুরু হয়। রামশরণের অপর পুত্র বেণীমাধব হলেন আমার প্রপিতামহ। বেণীমাধবের ঠিক কয়টি সন্তান ছিল এই নিয়ে দ্বিমত আছে। কেউ বলেন তিন পুত্র কেউ বলেন চার। এর মধ্যে দুই পুত্র পঞ্চানন(আমার পিতামহ যিনি সুরুল ছোটোবাড়ির কুলপুরোহিত ছিলেন) এবং দোলগোবিন্দ সুরুলেই বসবাস করতেন। শোনা যায় বেণীমাধবের এক পুত্র সন্ন্যাসী হয়ে গিয়েছিলেন। যদিও তার সত্যতা যাচাই করা যায়নি। এর মধ্যে সারদাশঙ্করের নাম আমি আমার বাবার মুখে শুনেছি। আবার আমার জ্যেঠতুতো দাদা(বিশুদা)-র মুখে শুনেছি বেণীমাধবের এক পুত্র ছিলেন অচ্যূতানন্দ। তিনিই সন্ন্যাসী হয়ে ওই নাম গ্রহণ করেছিলেন কিনা এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে বংশপরম্পরায় আমাদের বাড়িতে সারাবছর পালা করে চারটি লক্ষ্মীপুজো পালন করা হতো। দুর্গাপুজোর পরেই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোটি বিনয়ভূষণের, কালীপুজোর দিনে লক্ষ্মীপুজোটি পঞ্চাননের, পৌষমাসের লক্ষ্মীপুজোটি দোলগোবিন্দের এবং চৈত্রমাসের লক্ষ্মীপুজোটি শশীভূষণের পরিবার করতেন এবং এখনও তাই চলে আসছে। বিভূতিভূষণ সন্তানহীন বলে তাদের কোনো পালা ছিল না। এর থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে মুখার্জিবাড়ীর মূল শাখা এই ক-টিভাগেই বিভক্ত ছিল। পরবর্তীকালে পঞ্চাননের কনিষ্ঠপুত্রের পরিবার আলাদাভাবে ভাদ্রমাসে একটি লক্ষ্মীপুজো করা শুরু করেন যা হয়ত বিভূতিভূষণের ভাগকে বোঝায়। পঞ্চাননের তিন পুত্র ওড়মবাপদ, শ্যামাপদ ও কালিকাপদ এবং এক কন্যা উলাঙ্গিনী। শুনেছি বারবার মৃত সন্তান প্রসব হতে থাকায় পঞ্চানন শ্মশানে গিয়ে তপস্যা করেন এবং আশীর্বাদ লাভ করেন। তারপরেই এই চারটি সন্তান হয়। তাই সকলের নাম শ্মশানকালী ও শিবের নামে রাখা হয়েছিল। খুব অল্প বয়সেই তাঁর স্ত্রীবিয়োগ হয়। এবং তিনি নিজেও মধ্য পঞ্চাশেই স্বর্গগত হন।

(ক্রমশ)

Author

  • রুদ্র কুমার মুখোপাধ্যায়

    বর্ষীয়ান লেখক রুদ্র কুমার মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৫৫ সালে বীরভূমের সুরুল গ্রামে। তিনি তাঁর তেরো ভাইবোনের মধ্যে একাদশতম। গ্রামের সুরুল প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তারপরে বোলপুর উচ্চবিদ্যালয়ে বিজ্ঞান শাখায় পড়াশোনা করেন। এরপরে বিশ্বভারতীর পল্লীশিক্ষাভবনে যোগ দেন কৃষিবিদ্যায় স্নাতকস্তরের পড়াশোনার জন্য। সেইসময় পশ্চিমবঙ্গে কৃষিবিদ্যায় স্নাতকোত্তর পড়াশোনার সুবিধা ছিল না। কিন্তু নিজের মেধার যোগ্যতায় বৃত্তি-প্রাপ্ত হয়ে পাড়ি দেন উত্তরপ্রদেশের গোবিন্দ বল্লভ পান্থ বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখানে তিনি স্নাতকোত্তর স্তরে কীটবিদ্যা বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন ও সর্বশ্রেষ্ঠ থিসিস (best master's thesis) পুরস্কার প্রাপ্ত হন। স্নাতকোত্তর পড়ার সময়েই চাকরির সুযোগ আসে ইউনাইটেড ব্যাংক অফ ইন্ডিয়াতে (যা বর্তমানে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের অন্তর্ভুক্ত)। পড়া শেষ করেই সেখানে যোগদান করেন অফিসার হিসেবে। কৃষিবিদ্যায় স্নাতকোত্তর হবার সুবাদে সেসময়ে গ্রামীণ চাষীদের ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের সুবিধা ও অসুবিধা দেখাশোনার কাজই ছিল মুখ্য। কাজের সূত্রে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় কাটাতে হয়েছে তাঁকে। শেষমেশ বাবা মায়ের টানে এসে থিতু হন সেই বোলপুরেই। বীরভূমের বিভিন্ন শাখায় কেটেছে বাকি কর্মজীবন। ২০১৬ সালে বীরভূমের আমোদপুর শাখা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। কর্মজীবনে ভারতবর্ষের বহু স্থানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। অবসর জীবনে বইপত্র পড়া, বাগান করা ও পূজা অর্চনাতে দিন কাটে। বিগত ১৫ বছর যাবৎ সুপ্রাচীন পারিবারিক দুর্গাপুজোয় পৌরোহিত্য করে আসছেন। পাশাপাশি সুবিশাল পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন তিনি। লেখক শ্রীমুখোপাধ্যায়ের কথায়, "প্রথাগতভাবে লেখালেখি করা হয়ে ওঠেনি কখনো। এখন অবসর জীবনে এসে একমাত্র মেয়ের আবদারে কলম ধরেছি।"

One thought on “আমার স্মৃতিতে বাড়ির দুর্গাপূজা(২য় পর্ব): রুদ্র কুমার মুখোপাধ্যায়”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

চাদিফাঁটা আমার সেকাল: বন্দে বন্দিশ
গদ্য- সাহিত্য স্মৃতিকথা

চাঁদিফাটা আমার সেকাল: বন্দে বন্দিশ

    মনে পড়ে যায় ছেলেবেলার সেইসব দিন, প্রচন্ড গরম থেকে স্বস্থির আরাম

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    শৈশবের গরমকাল: মধুরিমা বন্দ্যোপাধ্যায়
    গদ্য- সাহিত্য স্মৃতিকথা

    শৈশবের গরমকাল: মধুরিমা বন্দ্যোপাধ্যায়

      শীত বুড়ির চাদর পেড়িয়ে যখন গ্রীষ্মকাল আসে দাবদাহ যেন ভৈরব সন্ন‍্যাসীর মতন তাড়া করে। আমাদের ছোটবেলায় মুঠোফোন অনেক দূরের ব‍্যাপার লোডশেডিং এর পাড়ায় কার্টুন দেখাও ছিল শক্ত কাজ।

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      শৈশবের গরমকাল: সুব্রত চৌধুরী
      গদ্য- সাহিত্য স্মৃতিকথা

       শৈশবের গরমকাল: সুব্রত চৌধুরী

        সেদিনও ছিল উষ্ণতার রুদ্র পরাক্রম-মন্দ্রিত দুপুরের নৈঃশব্দ্য। ছিল চৈত্র শেষে চড়ক, শিবের গাজন আর তুলসীতলায় বসুন্ধরার আয়োজন

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন