Recent Post

আমার স্মৃতিতে বাড়ির দুর্গাপূজা(১০ম পর্ব): রুদ্র কুমার মুখোপাধ্যায়

(আগের পর্বটি পড়ুন)

দশমীর দিন নিয়ম করে মায়ের জাগরণ, দন্তমার্জনা এবং স্নান করিয়ে পূজা শুরু হয়। এদিনের তাৎপর্য হল বেলপাতা লেখা। বেলপাতার মাঝের পাতায় তিনবার শ্রীশ্রীদুর্গামাতা সহায়, বামদিকের পাতায় শ্রীশ্রীলক্ষীমাতা সহায় ও ডানদিকের পাতায় শ্রীশ্রীসরস্বতীমাতা সহায় লিখে, পাতায় সিঁদুর দিয়ে সবাই মায়ের পায়ে দেয়। এরপর যাত্রা করানোর জন্য টাকার মুদ্রাতে সিঁদুর মাখিয়ে কুবেররাজ, লক্ষীদেবী ও ইন্দ্রের পুজো করা হয়।  শ্রীশ্রীদুর্গামাতাঠাকুরানীর হিসেবের খাতাটিও মালক্ষীর পায়ে ছুইঁয়ে রাখা হয়। এরপর অপরাজিতা বলয়ধারণ। প্রথমে অপরাজিতা লতা দিয়ে বলয়টি তৈরি করে, হলুদ টুকরো কাপড়ের মধ্যে শ্বেতসরিষা দিয়ে বেঁধে বলয় তৈরি করা হয়। এরপর তন্ত্রধারকের সঙ্গে ধারণমন্ত্র উচ্চারণ করে বলয়টি দক্ষিণহস্তে ধারণ করতে হয়। দশমীর দিন অন্নভোগ হয় না। ওইদিন চিঁড়া গুড় দিয়ে দেবী দুর্গা, বোধনঘটে ও মা মনসাকে ভোগ দেওয়া হয়, এরপর প্রথমে মায়ের সামনের ২টি ঘট এবং মাদুর্গাকে বিসর্জন করা হয়।

এই সময় লক্ষী, সরস্বতী ছাড়া(এঁদেরকে হৃদয়ে ধারণ করে রাখতে হয়) সমস্ত দেবদেবী এমনকি নবপত্রিকাকেও মন্ত্র পড়ে বিসর্জন দেওয়া হয়। লক্ষ্মীর প্রতিমা ছাড়াও বাড়ির গৃহলক্ষ্মী যিনি পুজোর কদিন প্রতিমার ডানপার্শ্বে অবস্থান করেন, তাঁকেও এইসময় ধারণ করে রাখতে হয়। এরপর শান্তিবারি প্রদান করা হয় ও সকলকে মায়ের পাদপুষ্প দেওয়া হয়। বিসর্জন শেষে গৃহলক্ষ্মীকে মাথায় করে নিত্যপূজার ঘরে পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে তিনি সারাবছর থাকেন। এই কাজটি লালদা বরাবর করে আসছে।  

বিসর্জনের পর পুনরায় নবপত্রিকাকে দোলায় বসিয়ে মনসা গাছ যেটিকে দশোহরার দিন রোপন করা হয়েছিল এবং মায়ের সামনের ঘট দুটি কাঁধে করে বাদ্যসহকারে নিয়ে গিয়ে নতুনপুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয়। একমাত্র হলুদ গাছের হলুদটি ছাড়িয়ে সকলকে একটুকরো করে দেওয়া হয় মুখে দেওয়ার জন্য। এটি খেলে রোগের উপশম হয়। এরপর বাদ্য ও নৃত্যসহকারে ফের বাড়ির দিকে রওনা দেওয়া হয়। কিন্তু এখানেও আমাদের বাড়ির একটি বিশেষত্ব আছে। যাওয়ার সময় বাড়ির ছেলেরা দোলা কাঁধে করে যায় কিন্তু ফেরার সময় বাড়ির মেয়েরা দোলা কাঁধে নিয়ে আসে। ফিরে এসে সকলের চোখে কাজলটা যেটি থেকে মাকে অঞ্জন নিবেদন করা হয়েছিল তার থেকে কাজল পরিয়ে দেওয়া হয় চোখে।

Author

  • রুদ্র কুমার মুখোপাধ্যায়

    বর্ষীয়ান লেখক রুদ্র কুমার মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৫৫ সালে বীরভূমের সুরুল গ্রামে। তিনি তাঁর তেরো ভাইবোনের মধ্যে একাদশতম। গ্রামের সুরুল প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তারপরে বোলপুর উচ্চবিদ্যালয়ে বিজ্ঞান শাখায় পড়াশোনা করেন। এরপরে বিশ্বভারতীর পল্লীশিক্ষাভবনে যোগ দেন কৃষিবিদ্যায় স্নাতকস্তরের পড়াশোনার জন্য। সেইসময় পশ্চিমবঙ্গে কৃষিবিদ্যায় স্নাতকোত্তর পড়াশোনার সুবিধা ছিল না। কিন্তু নিজের মেধার যোগ্যতায় বৃত্তি-প্রাপ্ত হয়ে পাড়ি দেন উত্তরপ্রদেশের গোবিন্দ বল্লভ পান্থ বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখানে তিনি স্নাতকোত্তর স্তরে কীটবিদ্যা বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন ও সর্বশ্রেষ্ঠ থিসিস (best master's thesis) পুরস্কার প্রাপ্ত হন। স্নাতকোত্তর পড়ার সময়েই চাকরির সুযোগ আসে ইউনাইটেড ব্যাংক অফ ইন্ডিয়াতে (যা বর্তমানে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের অন্তর্ভুক্ত)। পড়া শেষ করেই সেখানে যোগদান করেন অফিসার হিসেবে। কৃষিবিদ্যায় স্নাতকোত্তর হবার সুবাদে সেসময়ে গ্রামীণ চাষীদের ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের সুবিধা ও অসুবিধা দেখাশোনার কাজই ছিল মুখ্য। কাজের সূত্রে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় কাটাতে হয়েছে তাঁকে। শেষমেশ বাবা মায়ের টানে এসে থিতু হন সেই বোলপুরেই। বীরভূমের বিভিন্ন শাখায় কেটেছে বাকি কর্মজীবন। ২০১৬ সালে বীরভূমের আমোদপুর শাখা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। কর্মজীবনে ভারতবর্ষের বহু স্থানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। অবসর জীবনে বইপত্র পড়া, বাগান করা ও পূজা অর্চনাতে দিন কাটে। বিগত ১৫ বছর যাবৎ সুপ্রাচীন পারিবারিক দুর্গাপুজোয় পৌরোহিত্য করে আসছেন। পাশাপাশি সুবিশাল পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন তিনি। লেখক শ্রীমুখোপাধ্যায়ের কথায়, "প্রথাগতভাবে লেখালেখি করা হয়ে ওঠেনি কখনো। এখন অবসর জীবনে এসে একমাত্র মেয়ের আবদারে কলম ধরেছি।"

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

শৈশবের গরমকাল: ঈশিতা পাল
গদ্য- সাহিত্য স্মৃতিকথা

শৈশবের গরমকাল: ঈশিতা পাল

    আমার শৈশব ভাড়াবাড়িতে। তাই গরমের ছুটিতে কাকু, জেঠুদের বাড়ি টানা একমাস ছুটি কাটাতে যেতাম। মামাবাড়িও যেতাম। ছেলেবেলার গরমকাল জুড়ে বেশ কিছু মজার স্মৃতি আছে

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    চাদিফাঁটা আমার সেকাল: বন্দে বন্দিশ
    গদ্য- সাহিত্য স্মৃতিকথা

    চাঁদিফাটা আমার সেকাল: বন্দে বন্দিশ

      মনে পড়ে যায় ছেলেবেলার সেইসব দিন, প্রচন্ড গরম থেকে স্বস্থির আরাম

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      শৈশবের গরমকাল: মধুরিমা বন্দ্যোপাধ্যায়
      গদ্য- সাহিত্য স্মৃতিকথা

      শৈশবের গরমকাল: মধুরিমা বন্দ্যোপাধ্যায়

        শীত বুড়ির চাদর পেড়িয়ে যখন গ্রীষ্মকাল আসে দাবদাহ যেন ভৈরব সন্ন‍্যাসীর মতন তাড়া করে। আমাদের ছোটবেলায় মুঠোফোন অনেক দূরের ব‍্যাপার লোডশেডিং এর পাড়ায় কার্টুন দেখাও ছিল শক্ত কাজ।

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন