দশমীর দিন নিয়ম করে মায়ের জাগরণ, দন্তমার্জনা এবং স্নান করিয়ে পূজা শুরু হয়। এদিনের তাৎপর্য হল বেলপাতা লেখা। বেলপাতার মাঝের পাতায় তিনবার শ্রীশ্রীদুর্গামাতা সহায়, বামদিকের পাতায় শ্রীশ্রীলক্ষীমাতা সহায় ও ডানদিকের পাতায় শ্রীশ্রীসরস্বতীমাতা সহায় লিখে, পাতায় সিঁদুর দিয়ে সবাই মায়ের পায়ে দেয়। এরপর যাত্রা করানোর জন্য টাকার মুদ্রাতে সিঁদুর মাখিয়ে কুবেররাজ, লক্ষীদেবী ও ইন্দ্রের পুজো করা হয়। শ্রীশ্রীদুর্গামাতাঠাকুরানীর হিসেবের খাতাটিও মালক্ষীর পায়ে ছুইঁয়ে রাখা হয়। এরপর অপরাজিতা বলয়ধারণ। প্রথমে অপরাজিতা লতা দিয়ে বলয়টি তৈরি করে, হলুদ টুকরো কাপড়ের মধ্যে শ্বেতসরিষা দিয়ে বেঁধে বলয় তৈরি করা হয়। এরপর তন্ত্রধারকের সঙ্গে ধারণমন্ত্র উচ্চারণ করে বলয়টি দক্ষিণহস্তে ধারণ করতে হয়। দশমীর দিন অন্নভোগ হয় না। ওইদিন চিঁড়া গুড় দিয়ে দেবী দুর্গা, বোধনঘটে ও মা মনসাকে ভোগ দেওয়া হয়, এরপর প্রথমে মায়ের সামনের ২টি ঘট এবং মাদুর্গাকে বিসর্জন করা হয়।

এই সময় লক্ষী, সরস্বতী ছাড়া(এঁদেরকে হৃদয়ে ধারণ করে রাখতে হয়) সমস্ত দেবদেবী এমনকি নবপত্রিকাকেও মন্ত্র পড়ে বিসর্জন দেওয়া হয়। লক্ষ্মীর প্রতিমা ছাড়াও বাড়ির গৃহলক্ষ্মী যিনি পুজোর কদিন প্রতিমার ডানপার্শ্বে অবস্থান করেন, তাঁকেও এইসময় ধারণ করে রাখতে হয়। এরপর শান্তিবারি প্রদান করা হয় ও সকলকে মায়ের পাদপুষ্প দেওয়া হয়। বিসর্জন শেষে গৃহলক্ষ্মীকে মাথায় করে নিত্যপূজার ঘরে পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে তিনি সারাবছর থাকেন। এই কাজটি লালদা বরাবর করে আসছে।
বিসর্জনের পর পুনরায় নবপত্রিকাকে দোলায় বসিয়ে মনসা গাছ যেটিকে দশোহরার দিন রোপন করা হয়েছিল এবং মায়ের সামনের ঘট দুটি কাঁধে করে বাদ্যসহকারে নিয়ে গিয়ে নতুনপুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয়। একমাত্র হলুদ গাছের হলুদটি ছাড়িয়ে সকলকে একটুকরো করে দেওয়া হয় মুখে দেওয়ার জন্য। এটি খেলে রোগের উপশম হয়। এরপর বাদ্য ও নৃত্যসহকারে ফের বাড়ির দিকে রওনা দেওয়া হয়। কিন্তু এখানেও আমাদের বাড়ির একটি বিশেষত্ব আছে। যাওয়ার সময় বাড়ির ছেলেরা দোলা কাঁধে করে যায় কিন্তু ফেরার সময় বাড়ির মেয়েরা দোলা কাঁধে নিয়ে আসে। ফিরে এসে সকলের চোখে কাজলটা যেটি থেকে মাকে অঞ্জন নিবেদন করা হয়েছিল তার থেকে কাজল পরিয়ে দেওয়া হয় চোখে।