Recent Post

অসুর মর্দন(৯ম পর্ব): জিৎ সরকার

(আগের পর্বটি পড়ুন)

দেখ আমি কোনো ক্লিশেড এক্সকিউজ দিতে চাই না বা কোনোরকম জাস্টিফিকেশন দিতে চাই না। আমার যেটা ঠিক মনে হয়েছে আমি করেছি সেটা তোদের চোখে এই সমাজের চোখে ভুল হতেও পারে। তবে যুগে যুগে মেয়েরাই কেন নষ্ট হবে বলতে পারিস? আমাদের গায়েই এই তকমাটা কেন লাগবে বারেবারে, রাতের অন্ধকারে আমরা যাদের সার্ভিস দিই তাদের কি কেউ নষ্ট পুরুষ বলে? অনেক ক্ষেত্রেই তারা কিন্তু সুপরিচিত আর সুপ্রতিষ্ঠিত। তবে শুধু আমরাই কেন? কেন সব আনন্দ থেকে বঞ্চিত, মূলস্রোত থেকে বিছিন্ন? আর মজার কথা কি জানিস, ওই ঘোষ জেঠিমার মতো মানুষদের মনে এই অসুরগুলো এখনো জীবন্ত। এই যে বুবুদা, পাড়ার ভদ্রছেলে এখন বোধহয় বিদেশে সেটেল্ড, যে আমার এমএমএস-টা পাড়ার সবাইকে ঘটা করে দেখিয়েছিলেন, কই কেউ তখন একবারও জিজ্ঞেস করেনি ও ওটা কোন সাইট থেকে কী ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে পেয়েছ। ঘোষজেঠিমাও তখন ব্যাপারটাকে  আড়াল করেছিল। কিন্তু ‌নষ্ট হল কে? না আমি। তুই জানিস দুর্গামূর্তির প্রথম মাটি কিন্তু আমাদের মতো নষ্ট মেয়েছেলেরদের কাছ থেকেই ‌আসে, নইলে মূর্তি গড়া অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তবুও এই উদযাপনে আমাদের কোনো অধিকার নেই। এই ধারনার অসুরটা আজও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাঁচে, মা দুর্গা এতবার মর্ত্যে এলেও একে এখনো বধ করতে পারেননি। তাই বলছিলাম আমি থাকতে চাইলেও ওরা দেবে না, ফিরতে চাইলেও ওরা ফিরতে দেবে না।” 

এতদিনের জামানো ক্ষতগুলো আজ মনে হয় প্রথম কারোর সামনে উন্মুক্ত হল। ঋজু ঠিক আগেকার মতোই বেবাক হয়ে পুরোটা শুনল। কথা শেষ হলে পাশে হাঁটতে থাকা শ্রীর মুখের দিকে তাকাল। রাস্তার দুপাশে কয়েক বাড়ি টুনিবাল্ব দিয়ে সাজানো হয়েছে, তার থেকে অল্প আলো রাস্তায় এসে পড়ছে, সেই আলো আঁধারিতে ঋজু বোঝার চেষ্টা করল শ্রীর মুখে চোখে এখন ঠিক কোন অভিব্যক্তি উঁকি দিচ্ছে। হঠাৎ তারা দুজনেই বুঝতে পারল তারা মন্ডপের কাছাকাছি এসে পড়েছে। সেখান থেকেই দেখা গেল মন্ডপের বাইরে অনেক লোকের ভিড়, হাতে বড়োসড় শিন্ড নিয়ে ফটো তুলছে সকলে। হঠাৎ শ্রী বলে উঠল “ওখানে অনেকে আছে যাওয়াটা বোধহয় ঠিক হবে না।” 

তারপর ঋজুর দিকে ফিরে বলল, “আমি হয়তো কাল বা পরশুই চলে যাব। আর দেখা হবে কিনা ঠিক নেই। ভালো থাকিস।”

ঋজুকে আর একটাও কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ফিরে চলল শ্রী। ঋজু চেয়ে রইল কিছুক্ষন, তারপর কানে একটা “ওই ঋজু একা ওদিকে কি করছিস? এদিকে আয়”— ডাক পৌঁছাতেই ঋজু পায়ে পায়ে  আনন্দমুখর কোলাহলের দিকে এগিয়ে গেল।

(ক্রমশ)

Author

  • জিৎ সরকার

    নবতরু ই-পত্রিকার একদম জন্মলগ্ন থেকে নিয়মিত লেখালেখির সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন তাঁদের মধ্যে লেখক জিৎ সরকার অন্যতম। ১৯৯৭ সালে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এরপর বাল্যকাল এবং বড়ো হয়ে ওঠা নদীয়ার করিমপুরে। স্থানীয় করিমপুর জগন্নাথ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হয়ে কৃষ্ণনাথ কলেজে জীববিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে করিমপুরেই থাকেন পেশায় ও নেশায় ছাত্র জিৎ সরকার। একই সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন লেখালেখির কাজও। জীববিদ্যাতে প্রথমশ্রেণিতে স্নাতক জিৎ সরকারের শখ প্রধানত লেখালেখি করা তছাড়াও বই পড়া, গান শোনা সিনেমা দেখা, রান্না করা, পুরোনো ইতিহাস ঘাটাঘাটি করা প্রভৃতিতেও উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। তাঁর লেখালেখির জীবন শুরু কবিতা দিয়ে। তারপরেও কিছু কবিতা লেখা হয়েছে। তার মধ্যে কিছু সোস্যাল মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে। দুটি কবিতা দুটি ওয়েব ম্যাগাজিনেও প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখি চলছে সমান তালে। এছাড়া ছবি আঁকা, ক্রিমিনোলজি সর্ম্পকে ধারনা প্রভৃতি বিষয়েও বিশেষ দক্ষ তিনি। তীক্ষ্ণ স্মৃতিধর জিৎ সরকারের লেখায় বুদ্ধিদীপ্তের ছাপ পরে লেখার পরতে পরতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার (১/১২ পর্ব)
গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার

    গাড়িটা যখন বড়ো গেটের সামনে এসে দাঁড়াল তখন শেষ বিকেলের সূর্য পশ্চিমাকাশে রক্তাভা ছড়িয়ে সেদিনকার মতো সন্ধ্যেকে আলিঙ্গন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব): জিৎ সরকার
    গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

    অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব): জিৎ সরকার

      ভিড়টা মোড়ের বাঁকে অদৃশ্য হতেই শ্রী ঘরের দিকে ফিরতে উদ্যত হল, হঠাৎ নীচের দরজায় আওয়াজ উঠল। বাধ্য হয়েই অভিমুখে বদলে শ্রী নীচে এসে দরজা খুলল। দেখল ঋজু দাঁড়িয়ে, মুখে একটা হাসি খেলছে। এই হাসিটা একদিন ফিরে এসে শ্রী কিন্তু লক্ষ্য করেনি

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      ধারাবাহিক গল্প

      অসুর মর্দন(১০ম পর্ব): জিৎ সরকার

        এতক্ষণে তমাল মুখের কঠিন রেখাগুলো অনেকটা সহজ হয়ে এসেছে, সে মৃদু হেসে বলে, “দ্যাখ পারব কি পারব না সেটা তো এখনি বলা যাচ্ছে না, তবে হ্যাঁ, একটা চেষ্টা করে দেখাই যাক, পরেরটা না-হয় পরেই বুঝে‌ নেব।

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন