দেখ আমি কোনো ক্লিশেড এক্সকিউজ দিতে চাই না বা কোনোরকম জাস্টিফিকেশন দিতে চাই না। আমার যেটা ঠিক মনে হয়েছে আমি করেছি সেটা তোদের চোখে এই সমাজের চোখে ভুল হতেও পারে। তবে যুগে যুগে মেয়েরাই কেন নষ্ট হবে বলতে পারিস? আমাদের গায়েই এই তকমাটা কেন লাগবে বারেবারে, রাতের অন্ধকারে আমরা যাদের সার্ভিস দিই তাদের কি কেউ নষ্ট পুরুষ বলে? অনেক ক্ষেত্রেই তারা কিন্তু সুপরিচিত আর সুপ্রতিষ্ঠিত। তবে শুধু আমরাই কেন? কেন সব আনন্দ থেকে বঞ্চিত, মূলস্রোত থেকে বিছিন্ন? আর মজার কথা কি জানিস, ওই ঘোষ জেঠিমার মতো মানুষদের মনে এই অসুরগুলো এখনো জীবন্ত। এই যে বুবুদা, পাড়ার ভদ্রছেলে এখন বোধহয় বিদেশে সেটেল্ড, যে আমার এমএমএস-টা পাড়ার সবাইকে ঘটা করে দেখিয়েছিলেন, কই কেউ তখন একবারও জিজ্ঞেস করেনি ও ওটা কোন সাইট থেকে কী ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে পেয়েছ। ঘোষজেঠিমাও তখন ব্যাপারটাকে আড়াল করেছিল। কিন্তু নষ্ট হল কে? না আমি। তুই জানিস দুর্গামূর্তির প্রথম মাটি কিন্তু আমাদের মতো নষ্ট মেয়েছেলেরদের কাছ থেকেই আসে, নইলে মূর্তি গড়া অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তবুও এই উদযাপনে আমাদের কোনো অধিকার নেই। এই ধারনার অসুরটা আজও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাঁচে, মা দুর্গা এতবার মর্ত্যে এলেও একে এখনো বধ করতে পারেননি। তাই বলছিলাম আমি থাকতে চাইলেও ওরা দেবে না, ফিরতে চাইলেও ওরা ফিরতে দেবে না।”

এতদিনের জামানো ক্ষতগুলো আজ মনে হয় প্রথম কারোর সামনে উন্মুক্ত হল। ঋজু ঠিক আগেকার মতোই বেবাক হয়ে পুরোটা শুনল। কথা শেষ হলে পাশে হাঁটতে থাকা শ্রীর মুখের দিকে তাকাল। রাস্তার দুপাশে কয়েক বাড়ি টুনিবাল্ব দিয়ে সাজানো হয়েছে, তার থেকে অল্প আলো রাস্তায় এসে পড়ছে, সেই আলো আঁধারিতে ঋজু বোঝার চেষ্টা করল শ্রীর মুখে চোখে এখন ঠিক কোন অভিব্যক্তি উঁকি দিচ্ছে। হঠাৎ তারা দুজনেই বুঝতে পারল তারা মন্ডপের কাছাকাছি এসে পড়েছে। সেখান থেকেই দেখা গেল মন্ডপের বাইরে অনেক লোকের ভিড়, হাতে বড়োসড় শিন্ড নিয়ে ফটো তুলছে সকলে। হঠাৎ শ্রী বলে উঠল “ওখানে অনেকে আছে যাওয়াটা বোধহয় ঠিক হবে না।”
তারপর ঋজুর দিকে ফিরে বলল, “আমি হয়তো কাল বা পরশুই চলে যাব। আর দেখা হবে কিনা ঠিক নেই। ভালো থাকিস।”
ঋজুকে আর একটাও কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ফিরে চলল শ্রী। ঋজু চেয়ে রইল কিছুক্ষন, তারপর কানে একটা “ওই ঋজু একা ওদিকে কি করছিস? এদিকে আয়”— ডাক পৌঁছাতেই ঋজু পায়ে পায়ে আনন্দমুখর কোলাহলের দিকে এগিয়ে গেল।