Recent Post

অসুর মর্দন(৭ম পর্ব): জিৎ সরকার

(আগের পর্বটি পড়ুন)

ওদিকে ঋজু এই সমস্ত কোলাহলের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে পাড়ার একমাত্র বাড়ির সামনে যার ঘরের মধ্যে আলো জ্বলছে, দেখেই বোঝা যায় এই বাড়িটিতে মানুষ আছে। বাড়িটা শ্রী-র কিংবা বলা ভাল শ্রী-দের, তবে অবশ্য এখন শ্রী একাই রয়েছে এখানে। শ্রীকে জন্মদিতে গিয়ে তার মা মারা যান। ছোটোবেলা থেকেই শ্যামলবাবুর একার আদর ও যত্নে শ্রী-র বেড়ে ওঠা। মেয়ের কলেজের কীর্তির ধাক্কাটা সইতে পারেননি। মেয়ে চলে যাওয়ার পর বাড়ি থেকে বেরোনো ‌কমিয়ে দিয়েছিলেন। কতটা লজ্জায়, কতকটা আপমানে আর কতকটা তার মেয়ের সম্পর্কে মানুষের অতিরিক্ত কৌতূহলের কারণে।‌ কয়েকদিন পর সকালে ঋজু তমালরা দেখা করতে গিয়েছিল শ্যামলবাবুর সঙ্গে। কিন্তু অনেক ডাকাডাকি করার পরেও যখন মানুষটির কোনো সাড়া শব্দ মেলে না তখন দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকা হয় এবং বেডরূমে শ্যামল বাবুর নিথর দেহটা পাওয়া তার, খোলা চোখে প্রানহীন একটা হাত খাটের পাশে ঝুলছে। পাড়ার ডাক্তার বোস এসে জানান ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে ভোরেই….,পাড়ার লোকেরা নিজেরাই শেষকৃত্য সম্পন্ন করে। শ্রীকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি কেউ কেউ। ঋজু একবার কথাটা বলার চেষ্টা করলেও তাকে ধমকে থামিয়ে দেওয়া হয়। তবে শ্রী পরে জানতে পেরেছিল, মাধ্যমটা অবশ্য ঋজু জানে না।

     ঋজু দরজার কয়েকবার টোকা দিল। ভেতর থেকে একটা আওয়াজ ভেসে এল, ”আসছি।”

Nabataru-e-Patrika-July-2022-13.jpg July 1, 2022

 কয়েক সেকেন্ড পর দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এল শ্রী। ঋজুকে দেখে বলল, “তুই এখানে? আয় ভেতরে আয়।” 

ঋজু উত্তর দিল, “না, এখন নয়”, কথাটা শোনা মাত্রই শ্রী-র কন্ঠে একরাশ‌ শ্লেষ ঝরে পড়ল‌, “আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম কোনো ভদ্রলোক মাথা উঁচু করে এ বাড়ির ভেতরে আসতে পারে না। সরি, আমারই ভুল হয়েছে।” 

ঋজু বুঝতে পারে কালকের অপমানটা এখনও বিঁধছে, সে কিন্তু কিন্তু করে বলে, “তোমায় নিয়ে যেতে এসেছি মন্ডপে, সেই কালকের পর তো আর যাওনি।”

“যাওয়াটা কি উচিত?” শ্রী উওর দেয়। “যেখানে এতটা আপমান‌ হয়, তাছাড়াও তুই যে আমায় নিয়ে যেতে এসেছিস সেটা আর কেউ জানে? জানলে তোকেও কিন্তু ছেড়ে কথা বলবে না ওরা।”

“সে নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না, আমি কথা দিচ্ছি কেউ কিচ্ছু বলবে না” প্রত্যুত্তরে ঋজু জানাল।

আসলে শ্রী জানে না যে গতকাল তার আসার খবর পেয়ে পাড়ার সদস্যরা রায় কাকুর বাড়িতে ছোট্ট একটা মিটিং করেছে। সেখানে প্রায় প্রত্যেকের বক্তব্য ছিল যে,  শ্রীকে এখনি পাড়া থেকে চলে যেতে বলা হোক, কে কখন তাকে চিনে ফেলে তখন আবার পাড়ার বদনাম। তবে ঋজুর বক্তব্য কিছুটা আলাদা, তার মতে পুজোটা সবার আর কাউকে যদি এর থেকে জোর করে বঞ্চিত করা হয় তবে সে আর সামনে বছর থেকে এ পুজোতে নেই, শ্রী এর সমর্থনে এ ধরনের কথা বলার জন্য ঋজুর বাবা অর্থাৎ প্রফেসর সাহেব-সহ আরও কয়েকজনের কাছে থেকে গঞ্জনাও সহ্য করতে হয়েছিল। মাঝখান থেকে রায়কাকু অর্থাৎ অখিলেশ রায়, একটা মধ্যস্থতা করে দেন, উনি বলেন, “আরে বাবা নিজেদের মধ্যে এত তর্কাতর্কি করে কি লাভ হবে, তার থেকে ওকে কিছু বলার দরকার নেই। এসেছে যখন পুজো দেখুক, ও তো নিজের মতোই থাকছে কাউকে তো কিছু বলছে না, আমরাও ওকে ঘাঁটাব না, এখন এ নিয়ে কথার আর প্রয়োজন নেই। পুজো কাটুক তারপর না হয় দেখা যাবে। এখন চলো সবাই, অনেক কাজ আছে, এই ঋজু চল চল আর দেরি নয় চল।” 

(ক্রমশ)

Author

  • জিৎ সরকার

    নবতরু ই-পত্রিকার একদম জন্মলগ্ন থেকে নিয়মিত লেখালেখির সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন তাঁদের মধ্যে লেখক জিৎ সরকার অন্যতম। ১৯৯৭ সালে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এরপর বাল্যকাল এবং বড়ো হয়ে ওঠা নদীয়ার করিমপুরে। স্থানীয় করিমপুর জগন্নাথ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হয়ে কৃষ্ণনাথ কলেজে জীববিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে করিমপুরেই থাকেন পেশায় ও নেশায় ছাত্র জিৎ সরকার। একই সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন লেখালেখির কাজও। জীববিদ্যাতে প্রথমশ্রেণিতে স্নাতক জিৎ সরকারের শখ প্রধানত লেখালেখি করা তছাড়াও বই পড়া, গান শোনা সিনেমা দেখা, রান্না করা, পুরোনো ইতিহাস ঘাটাঘাটি করা প্রভৃতিতেও উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। তাঁর লেখালেখির জীবন শুরু কবিতা দিয়ে। তারপরেও কিছু কবিতা লেখা হয়েছে। তার মধ্যে কিছু সোস্যাল মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে। দুটি কবিতা দুটি ওয়েব ম্যাগাজিনেও প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখি চলছে সমান তালে। এছাড়া ছবি আঁকা, ক্রিমিনোলজি সর্ম্পকে ধারনা প্রভৃতি বিষয়েও বিশেষ দক্ষ তিনি। তীক্ষ্ণ স্মৃতিধর জিৎ সরকারের লেখায় বুদ্ধিদীপ্তের ছাপ পরে লেখার পরতে পরতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার (১/১২ পর্ব)
গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার

    গাড়িটা যখন বড়ো গেটের সামনে এসে দাঁড়াল তখন শেষ বিকেলের সূর্য পশ্চিমাকাশে রক্তাভা ছড়িয়ে সেদিনকার মতো সন্ধ্যেকে আলিঙ্গন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব): জিৎ সরকার
    গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

    অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব): জিৎ সরকার

      ভিড়টা মোড়ের বাঁকে অদৃশ্য হতেই শ্রী ঘরের দিকে ফিরতে উদ্যত হল, হঠাৎ নীচের দরজায় আওয়াজ উঠল। বাধ্য হয়েই অভিমুখে বদলে শ্রী নীচে এসে দরজা খুলল। দেখল ঋজু দাঁড়িয়ে, মুখে একটা হাসি খেলছে। এই হাসিটা একদিন ফিরে এসে শ্রী কিন্তু লক্ষ্য করেনি

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      ধারাবাহিক গল্প

      অসুর মর্দন(১০ম পর্ব): জিৎ সরকার

        এতক্ষণে তমাল মুখের কঠিন রেখাগুলো অনেকটা সহজ হয়ে এসেছে, সে মৃদু হেসে বলে, “দ্যাখ পারব কি পারব না সেটা তো এখনি বলা যাচ্ছে না, তবে হ্যাঁ, একটা চেষ্টা করে দেখাই যাক, পরেরটা না-হয় পরেই বুঝে‌ নেব।

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন