Recent Post

অসুর মর্দন(৬ষ্ঠ পর্ব): জিৎ সরকার

(আগের পর্বটি পড়ুন)

গতকাল রনিতা উত্তেজনায় প্রথমদিকে অতটা তলিয়ে ভাবেনি, তবে রাত্রে একা ঘরে শুয়ে যতই ভেবেছে আর একটা দিক উঠে এসেছে ওর ভাবনায় এবং সেটা ভালো কিছু নয়। 

আচ্ছা রনিতা আর তমালের সম্পর্কের কথা জানতে পেরে ওর বাবা যদি তমালের কোনো ক্ষতি করে তখন? এই প্রশ্নটা বারবার রনিতার সুখস্বপ্নের দোরগোড়ায় এসে করাঘাত করতে থাকে। রনিতার নিজের বাবা বলেই সে ভালো করে জানে যে নিজের ভাবনায়, ধারনায় আঘাত লাগলে বাইরে থেকে নিপাট ভালোমানুষ দেখতে আখতার সাহেব ঠিক কতটা সাংঘাতিক হতে পারেন। এই যে রনিতার উদারচেতা মনোভাব, এই পুজোয় মেতে ওঠা, এই সবের জন্য তাকে প্রথম দিকে কতটা শাসন সহ্য করতে হয়েছিল। শুধু তাকেই নয় তার মাকেও, কারণ এই জাতপাত আর ধর্মান্ধতার অসুর বধ করে তার মনের নরম মাটিতে আলোর বীজটি সর্বপ্রথম বপন করেছিলেন ওই মানুষটিই, তার মা। কিন্তু অসুর বধ কী এত সহজ? নয় বোধহয়, তাই তো বাবার মনের অন্তরে আজও তারা একচেটিয়া ভাবে আধিপত্য বিস্তার করে বসে আছে। আর এই অসুরগুলোকে এবার রনিতাও ভয় পাচ্ছে। আগে এতটা পেত না তাই তো লড়াই করার সাহস সে ধরে রেখেছিল, তবে এবার পাচ্ছে। ভালোবাসা যেমন মানুষকে ভীতিহীন করে তেমনই ভালোবাসার মানুষের ক্ষতির আশঙ্কা মানুষকে দুর্বল‌ও করে। তাই আজ নবমীর সন্ধ্যায় রনিতা তমালকে বলেই বসল, “তোমার সাথে সম্পর্কটা আর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া বোধহয় সম্ভব নয়।”

Nabataru-e-Patrika-June-2022-12.jpg

তমাল শুনে প্রথমটা খুব অবাক হল, একরাতের মধ্যে এমন কী হল যে রনিতা নিজের সিদ্ধান্ত বদলে ফেলল— এটা তার ঠিক বোধগম্য হচ্ছিল না। এবার রনিতা সবটা খুলে বলল তমালকে, বলল তার দুশ্চিন্তার কথাও। সব শুনে তমাল বলল, “দেখ রনিতা, তুই অমূলক ভয় পাচ্ছিস। তাছাড়াও এখন সময় পালটেছে, এখন এসমস্ত জাতপাত কেউ এত মানে‌ না। তাছাড়াও কাকু কেন বুঝতে পারছেন না বলতে পারিস? বুঝবে আমরা যদি বোঝাই অবশ্যই ‌বুঝবে। আর একটা কথা তুই এখন সাবালিকা, তুই একটা সিদ্ধান্ত নিলে কারও অধিকার নেই তোর উপর জোর খাটিয়ে সেটাকে বদলানোর। তাই আমার মনে হয় কোনও সমস্যা হবে না। উত্তরে রনিতা বলল, “সব জায়গায় কি নিয়ম কানুন খাটে। তাছাড়া পাপাকে তুমি চেনোই, তার কথা অমান্য করলে তিনি কতদূর যেতে পারেন। সেই সেবারে পাপা নিষেধ করার সত্ত্বেও বন্ধুদের সাথে নাইট-স্টে করেছিলাম, মম্ ব্যাপারটা জানত কিন্তু পাপাকে জানাইনি, পরে জানতে পেরে মম্-এর গায়ে‌ হাত তুলেছিল মানুষটা। নিজের স্ত্রী বলে শাসনের খামতি ঘটেনি। সেখানে তুমি তো পরের ছেলে। না গো, তোমার যদি কিছু ক্ষতি হয়ে যায়, এই রিস্কটা আমি নিতে পারব না।” 

তমাল চুপটি করে কথাগুলো শুনল, তারপর কতকটা অভিমানের স্বরে বলে উঠল, “জানিস আমি ভাবতাম আমিই বেশি ভীতু, এতটাই যে নিজের মনের কথাটা সহজ করে তোকে বলতে এতটা সময় লেগে যাবে, তবে আমার থেকে বেশি ভীতু হয়তো তুই। এই যে বাইরে তুই প্রচলিত অন্ধবিশ্বাসগুলোকে ভাঙার জন্য এত কাজকর্ম করিস, সাহস দেখাস কিন্তু ভিতরে ভিতরে তুই একটা ভীতু। আমি তো তাও একটা চেষ্টা করেছি, তুইতো একটা চেষ্টাও না করে হার মানতে চাইছিস। কেউ একজন আমায় বলেছিল ভালোবাসতে গেলে একটু সাহসী হতে হয়। কথাটা খুব সত্যি জানিস, এই সাহসটুকু না থাকলে বাধা বিপত্তির চোখে চোখ রেখে নতুন শুরুটা করা যায় না। তুইও জানিস আমার বাড়িতে জানলেও ব্যাপারটা মানবে না। আমার বাড়ির লোক বাইরে প্রোগ্রেসিভ হোক না কেন ভেতর সেই বস্তাপচা মেন্টালিটি। তবু তো আমি ভয় পাচ্ছি না, তবে তুই কেন…? তুই হয়ত ঠিকই বলেছিস আমাদের সম্পর্কটা আর এগানো উচিত নয়।” 

বলেই তমাল হনহন করে সেখান থেকে চলে গেল। তার গমন পথের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল রনিতার বুক কাঁপিয়ে।

(ক্রমশ)

Author

  • জিৎ সরকার

    নবতরু ই-পত্রিকার একদম জন্মলগ্ন থেকে নিয়মিত লেখালেখির সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন তাঁদের মধ্যে লেখক জিৎ সরকার অন্যতম। ১৯৯৭ সালে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এরপর বাল্যকাল এবং বড়ো হয়ে ওঠা নদীয়ার করিমপুরে। স্থানীয় করিমপুর জগন্নাথ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হয়ে কৃষ্ণনাথ কলেজে জীববিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে করিমপুরেই থাকেন পেশায় ও নেশায় ছাত্র জিৎ সরকার। একই সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন লেখালেখির কাজও। জীববিদ্যাতে প্রথমশ্রেণিতে স্নাতক জিৎ সরকারের শখ প্রধানত লেখালেখি করা তছাড়াও বই পড়া, গান শোনা সিনেমা দেখা, রান্না করা, পুরোনো ইতিহাস ঘাটাঘাটি করা প্রভৃতিতেও উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। তাঁর লেখালেখির জীবন শুরু কবিতা দিয়ে। তারপরেও কিছু কবিতা লেখা হয়েছে। তার মধ্যে কিছু সোস্যাল মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে। দুটি কবিতা দুটি ওয়েব ম্যাগাজিনেও প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখি চলছে সমান তালে। এছাড়া ছবি আঁকা, ক্রিমিনোলজি সর্ম্পকে ধারনা প্রভৃতি বিষয়েও বিশেষ দক্ষ তিনি। তীক্ষ্ণ স্মৃতিধর জিৎ সরকারের লেখায় বুদ্ধিদীপ্তের ছাপ পরে লেখার পরতে পরতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার (১/১২ পর্ব)
গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার

    গাড়িটা যখন বড়ো গেটের সামনে এসে দাঁড়াল তখন শেষ বিকেলের সূর্য পশ্চিমাকাশে রক্তাভা ছড়িয়ে সেদিনকার মতো সন্ধ্যেকে আলিঙ্গন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব): জিৎ সরকার
    গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

    অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব): জিৎ সরকার

      ভিড়টা মোড়ের বাঁকে অদৃশ্য হতেই শ্রী ঘরের দিকে ফিরতে উদ্যত হল, হঠাৎ নীচের দরজায় আওয়াজ উঠল। বাধ্য হয়েই অভিমুখে বদলে শ্রী নীচে এসে দরজা খুলল। দেখল ঋজু দাঁড়িয়ে, মুখে একটা হাসি খেলছে। এই হাসিটা একদিন ফিরে এসে শ্রী কিন্তু লক্ষ্য করেনি

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      ধারাবাহিক গল্প

      অসুর মর্দন(১০ম পর্ব): জিৎ সরকার

        এতক্ষণে তমাল মুখের কঠিন রেখাগুলো অনেকটা সহজ হয়ে এসেছে, সে মৃদু হেসে বলে, “দ্যাখ পারব কি পারব না সেটা তো এখনি বলা যাচ্ছে না, তবে হ্যাঁ, একটা চেষ্টা করে দেখাই যাক, পরেরটা না-হয় পরেই বুঝে‌ নেব।

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন