এবারে একটা প্রচন্ড বিরক্তির ভাব নিয়ে গলাটাকে যতটা তুললে সেটা কে চিৎকার করা বোঝায়, ঠিক ততটাই তুলে তিনি বললেন, “এমন ভাব করছিস যেন কিছুই বুঝিস না। তোর মতো নষ্ট মেয়েছেলের যে এরকম ভদ্র পাড়ায় কোনো জায়গা নেই এটা তোর বোঝা উচিত। আর তুই পাড়ায় থাকতে কী করেছিলি তা কি আমরা ভুলে গেছি আর চলে গিয়েও কী করেছিস কী করেছিস তাও আমরা জানি, আরে বাবা আমরা তো আর ঘাসে মুখ দিয়ে চলি না।”
ঋজু ততক্ষণে প্রমাদ গুনেছে এবং ঘোষ জেঠিমার দিকে ঘুরে “আঃ, জেঠিমা” বলে তাকে শান্ত করার চেষ্টায় আছে। তবে ঘোষ জেঠিমার মুখ ততক্ষণে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে পরিনত হয়েছে এবং সেখান থেকে নিরন্তর লাভা উদগীরণ হচ্ছে। উনি এবার আশেপাশে উপস্থিত পাড়ার লোকজনের উদ্দেশ্যে বলে চলেছেন, “আপনারাই বলুন ওই রকম একটা নষ্ট মেয়েমানুষ বলা নেই কওয়া নেই সোজা এসে মন্ডপে ঢুকে পড়বে, এতো মেনে নেওয়া যায় না। এখানে আমাদের ছেলেপুলে সব আছে, তাদের উপর কী বিরূপ প্রভাব পড়বে ভেবে দেখেছেন।”

ওদিকে যার সম্পর্কে এইসমস্ত কথা বলা সেই শ্রী এতসব কথার উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে গেছে। তার গমন পথের দিকে তাকিয়ে ঋজু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর জেঠিমার দিকে চেয়ে বলল, “জেঠিমা এতসব কথা বলার তো কোনো দরকার ছিল না। তুমি এত চেঁচামেচি যদি না করতে মেয়েটা এত অস্বস্তি তে পড়ে এখান থেকে চলে যেতে হতো না, এটা একটা পুজোর জায়গা আর পুজোটা সবার। আর এত ভদ্রপাড়া ভদ্রপাড়া বলে তুমি চেচাচ্ছ না সব ভদ্রলোকেদের আমার চেনা আছে। মুখোশটা টেনে খুলতে না এক মিনিট সময় লাগবে।”
প্রায় এক নিঃশ্বাসে ঋজু কথাগুলো বলে গেল, ঘোষ জেঠিমাও ঋজুর এই অর্তকিত আক্রমণে কিছুটা হতচকিত হয়ে গিয়েছিলেন, সামলে নিয়ে তিনি বললেন, “কী, তুই আমাকে এতগুলো কথা শোনাতে পারলি?”
ইত্যাদি কথা বলতে শুরু করলেন, ঋজু সে সব কথাতে ভ্রূক্ষেপ না করে মন্ডপ থেকে বেরিয়ে গেল।
মানুষের খুশির মুহূর্ত ঠিক মেলায় থেকে কেনা বেলুনগুলোর মতো, খুবই অল্পক্ষণ থাকে আর তারপর চুপসে যায়। তবে যতক্ষন থাকে সময়গুলো যে কীভাবে কাটে ঠিক বোধগম্য হয়, খেয়াল হয় শেষ প্রহরে এসে। ঠিক এই নিয়মের বশেই নবমী নিশি উপস্থিত। পুজোর শেষ মুহূর্তের প্রহরগুলো বেঁচে নিচ্ছে ধুনুচির নাচে, অথবা ঢাকের লড়াইয়ে। প্যান্ডেলের মাইকে আগমনি সংগীত আর হালের সিনেমার গানের ফাঁকে ফাঁকে বাজছে করোনা থেকে সুরক্ষাবিধির আপটেড। তবে দুটো মানুষের মুখে এই শেষ মুহূর্তের আনন্দগুলোকেও ছাপিয়ে বেশি করে প্রকাশ পাচ্ছে বিষাদ। মানুষ দুটি তমাল আর রনিতা, তার দাঁড়িয়ে আছে মন্ডপের একপাশে যেখানে পাড়ার অন্যরাও উপস্থিত, চলছে আড্ডা, ধুনুচি নাচ, ঢাকের লড়াই আর গতরাত্রে বাকি থেকে যাওয়া প্যান্ডেল হপিং-এর প্ল্যানিং।