Recent Post

অসুর মর্দন(৫ম পর্ব): জিৎ সরকার

(আগের পর্বটি পড়ুন)

এবারে একটা প্রচন্ড বিরক্তির ভাব নিয়ে গলাটাকে যতটা তুললে সেটা কে চিৎকার করা বোঝায়, ঠিক ততটাই তুলে তিনি বললেন, “এমন ভাব করছিস যেন কিছুই বুঝিস না। তোর মতো নষ্ট মেয়েছেলের যে এরকম ভদ্র পাড়ায় কোনো জায়গা নেই এটা তোর বোঝা উচিত। আর তুই পাড়ায় থাকতে কী করেছিলি তা কি আমরা ভুলে গেছি আর চলে গিয়েও কী করেছিস কী করেছিস তাও আমরা জানি, আরে বাবা আমরা তো আর ঘাসে মুখ দিয়ে চলি না।” 

ঋজু ততক্ষণে প্রমাদ গুনেছে এবং ঘোষ জেঠিমার দিকে ঘুরে “আঃ, জেঠিমা” বলে তাকে শান্ত করার চেষ্টায় আছে। তবে ঘোষ জেঠিমার মুখ ততক্ষণে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে পরিনত হয়েছে এবং সেখান থেকে নিরন্তর লাভা উদগীরণ হচ্ছে। উনি এবার আশেপাশে উপস্থিত পাড়ার লোকজনের উদ্দেশ্যে বলে চলেছেন, “আপনারাই বলুন ওই রকম একটা নষ্ট মেয়েমানুষ বলা নেই কওয়া নেই সোজা এসে মন্ডপে ঢুকে পড়বে, এতো মেনে নেওয়া যায় না। এখানে আমাদের ছেলেপুলে সব আছে, তাদের উপর কী বিরূপ প্রভাব পড়বে ভেবে দেখেছেন।”

ওদিকে যার সম্পর্কে এইসমস্ত কথা বলা সেই শ্রী এতসব কথার উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে গেছে। তার গমন পথের দিকে তাকিয়ে ঋজু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর জেঠিমার দিকে চেয়ে বলল, “জেঠিমা এতসব কথা বলার তো কোনো দরকার ছিল না। তুমি এত চেঁচামেচি যদি না করতে মেয়েটা এত অস্বস্তি তে পড়ে এখান থেকে চলে যেতে হতো না, এটা একটা পুজোর জায়গা আর পুজোটা সবার। আর এত ভদ্রপাড়া ভদ্রপাড়া বলে তুমি চেচাচ্ছ না সব ভদ্রলোকেদের আমার চেনা আছে। মুখোশটা টেনে খুলতে না এক মিনিট সময় লাগবে।” 

প্রায় এক নিঃশ্বাসে ঋজু কথাগুলো বলে গেল, ঘোষ জেঠিমাও ঋজুর এই অর্তকিত আক্রমণে কিছুটা হতচকিত হয়ে গিয়েছিলেন, সামলে নিয়ে তিনি বললেন, “কী, তুই আমাকে এতগুলো কথা শোনাতে পারলি?” 

ইত্যাদি কথা বলতে শুরু করলেন, ঋজু সে সব কথাতে ভ্রূক্ষেপ না করে মন্ডপ থেকে বেরিয়ে গেল।

       মানুষের খুশির মুহূর্ত ঠিক মেলায় থেকে কেনা বেলুনগুলোর মতো, খুবই অল্পক্ষণ থাকে আর তারপর চুপসে যায়। তবে যতক্ষন থাকে সময়গুলো যে কীভাবে কাটে ঠিক বোধগম্য হয়, খেয়াল হয় শেষ প্রহরে এসে। ঠিক এই নিয়মের বশেই নবমী নিশি উপস্থিত। পুজোর শেষ মুহূর্তের প্রহরগুলো বেঁচে নিচ্ছে ধুনুচির নাচে, অথবা ঢাকের লড়াইয়ে। প্যান্ডেলের মাইকে আগমনি সংগীত আর হালের সিনেমার গানের ফাঁকে ফাঁকে বাজছে করোনা থেকে সুরক্ষাবিধির আপটেড। তবে দুটো মানুষের মুখে এই শেষ মুহূর্তের আনন্দগুলোকেও ছাপিয়ে বেশি করে প্রকাশ পাচ্ছে বিষাদ। মানুষ দুটি তমাল আর রনিতা, তার দাঁড়িয়ে আছে মন্ডপের একপাশে যেখানে পাড়ার অন্যরাও উপস্থিত, চলছে আড্ডা, ধুনুচি নাচ, ঢাকের লড়াই আর গতরাত্রে বাকি থেকে যাওয়া প্যান্ডেল হপিং-এর প্ল্যানিং।

(ক্রমশ)

Author

  • জিৎ সরকার

    নবতরু ই-পত্রিকার একদম জন্মলগ্ন থেকে নিয়মিত লেখালেখির সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন তাঁদের মধ্যে লেখক জিৎ সরকার অন্যতম। ১৯৯৭ সালে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এরপর বাল্যকাল এবং বড়ো হয়ে ওঠা নদীয়ার করিমপুরে। স্থানীয় করিমপুর জগন্নাথ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হয়ে কৃষ্ণনাথ কলেজে জীববিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে করিমপুরেই থাকেন পেশায় ও নেশায় ছাত্র জিৎ সরকার। একই সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন লেখালেখির কাজও। জীববিদ্যাতে প্রথমশ্রেণিতে স্নাতক জিৎ সরকারের শখ প্রধানত লেখালেখি করা তছাড়াও বই পড়া, গান শোনা সিনেমা দেখা, রান্না করা, পুরোনো ইতিহাস ঘাটাঘাটি করা প্রভৃতিতেও উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। তাঁর লেখালেখির জীবন শুরু কবিতা দিয়ে। তারপরেও কিছু কবিতা লেখা হয়েছে। তার মধ্যে কিছু সোস্যাল মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে। দুটি কবিতা দুটি ওয়েব ম্যাগাজিনেও প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখি চলছে সমান তালে। এছাড়া ছবি আঁকা, ক্রিমিনোলজি সর্ম্পকে ধারনা প্রভৃতি বিষয়েও বিশেষ দক্ষ তিনি। তীক্ষ্ণ স্মৃতিধর জিৎ সরকারের লেখায় বুদ্ধিদীপ্তের ছাপ পরে লেখার পরতে পরতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার (১/১২ পর্ব)
গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার

    গাড়িটা যখন বড়ো গেটের সামনে এসে দাঁড়াল তখন শেষ বিকেলের সূর্য পশ্চিমাকাশে রক্তাভা ছড়িয়ে সেদিনকার মতো সন্ধ্যেকে আলিঙ্গন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব): জিৎ সরকার
    গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

    অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব): জিৎ সরকার

      ভিড়টা মোড়ের বাঁকে অদৃশ্য হতেই শ্রী ঘরের দিকে ফিরতে উদ্যত হল, হঠাৎ নীচের দরজায় আওয়াজ উঠল। বাধ্য হয়েই অভিমুখে বদলে শ্রী নীচে এসে দরজা খুলল। দেখল ঋজু দাঁড়িয়ে, মুখে একটা হাসি খেলছে। এই হাসিটা একদিন ফিরে এসে শ্রী কিন্তু লক্ষ্য করেনি

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      ধারাবাহিক গল্প

      অসুর মর্দন(১০ম পর্ব): জিৎ সরকার

        এতক্ষণে তমাল মুখের কঠিন রেখাগুলো অনেকটা সহজ হয়ে এসেছে, সে মৃদু হেসে বলে, “দ্যাখ পারব কি পারব না সেটা তো এখনি বলা যাচ্ছে না, তবে হ্যাঁ, একটা চেষ্টা করে দেখাই যাক, পরেরটা না-হয় পরেই বুঝে‌ নেব।

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন