Recent Post

অসুর মর্দন(৩য় পর্ব): জিৎ সরকার

(আগের পর্বটি পড়ুন)

বারো ইয়ারের বারো হাত ধরে আজ অষ্টমী উপস্থিত। অষ্টমী মানেই শাড়ি আর পাঞ্জাবির সঙ্গে শরতের প্রেম, অষ্টমী মানেই ঠাকুর মশাইয়ের দ্রুত বলা মন্ত্রের মধ্যে খেই হারিয়ে মায়ের কাছে “কিছুই তো ঠিক করে শুনতে পেলাম না, কী যে বললাম, মাগো অপরাধ নিয়ো না”—বলে একঝাঁক ইচ্ছেকে মায়ের পায়ে অর্পণ, অষ্টমী মানেই ধোঁয়া ওঠা ভোগের খিচুড়ির হুসহাস শব্দে আস্বাদন করতে করতে একটু আড্ডা একটু “গত বছর মনে আছে, এই অষ্টমীতেই…” টাইপ নষ্টালজিয়ায় ভাসা। আজ অবশ্য ঋজুদের কাজের চাপ একটু কম কারণ অষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলির আর পুজোর জোগাড় পাড়ার মাহিলারাই করে থাকেন প্রতি বছর আর এখনও দর্শনার্থীদের ভিড় করতে শুরু করেনি অতএব আজ একটু আড্ডা মারার ফুরসত পাওয়া যাবে যতক্ষন না অঞ্জলি হচ্ছে, তারপর ভোগ খাওয়ানোর দায়িত্ব অবশ্য ঋজু দের।

তমালের ধারনা টা মিলে গেছে, তার হলুদ পাঞ্জাবির সঙ্গে রিনিতার হলুদ লাল পেড়ে শাড়ি। তবে মুশকিল হল রনিতা মন্ডপে আসার পর থেকে তমাল একবারের জন্যও তার কাছাকাছি যেতে পারেনি; তার উপর তমালের মা-বাবা তো আছেনই। আর আছে সৌমিলি, তমালদের পাশের বাড়ি রায়কাকুর মেয়ে। এই রায়কাকু আবার তমালের বাবার অফিস কলিগ, আর রায়কাকিমা তমালের মায়ের ওই যাকে বলে ‘মর্ডান ভার্সান অফ সই’। আজ এরা সবাই জটলা করেছে মন্ডপের একদিকে, নানাবিধ আলোচনা চলছে, এর মধ্যে সৌমিলি তমালকে তার নেক্সট তিনবছরের প্ল্যানিং শোনাচ্ছে, সৌমিলি ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট, তাছাড়া নাচ গান সবেতেই আছে এবং ভালোভাবেই আছে কিন্তু মুশকিল হলো মেয়েটা কিছুতেই নিজেকে ছেড়ে বেরোতে পারে না। তবে তমালের মন আর চোখ দুটোই রনিতার  দিকে। খোলাচুলে সদ্যস্নাতা রনিতাকে দেখে তমালের ভ্রম হচ্ছে স্বয়ং মা দুর্গাই হয়তো বেদি থেকে তার সামনে এসে উপস্থিত হয়েছে। রনিতাও একদৃষ্টে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল তারপর চোখ দিয়ে ইশারা করল এদিকে আসার জন্য। কিন্তু হায়! তমাল আজ উত্তর করতে অপারক। তবে আজ বলতেই হবে মনের কথাটা নইলে বড্ড দেরি হয়ে যাবে কিন্তু তার আগে মা আর বাবাকে হালকা করে কাটাতে হবে, তমাল বাড়ি থেকে ঠিক করেই বেরিয়েছে। এতক্ষণ মাইকে অষ্টমী পূজার মন্ত্রোচ্চারন চলছিল এবার শোনা গেল “যারা অঞ্জলি দেবেন দয়া করে বেদির সামনের ফাঁকা জায়গায় এসে উপস্থিত হন, আগে শান্তি জল ছেটানো হবে তারপর অঞ্জলি শুরু হবে।” 

অঞ্জলি দেওয়া শেষ হলে সবাই যখন প্রসাদ ইত্যাদি দেওয়ার ও নেওয়ার আর মায়ের পায়ে হেঁট হওয়ার কাজে ব্যস্ত তখন তমাল রনিতাকে খুঁজতে খুঁজতে বাইরে বেরিয়ে আসল। বাইরে এসে এদিক ওদিক তাকাতেই চোখে পড়ল রনিতা মন্ডপের ডানদিকে দাঁড়িয়ে ফোনে চোখ কুঁচকে কী যেন দেখার চেষ্টা করছে। তমাল কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, “কীরে, অঞ্জলি তো দেওয়া হল, কী চাইলি মায়ের কাছে?” 

রনিতা উত্তর করল “আমায় কেন, যাও না তোমার সৌমিলিকেই জিজ্ঞেস কর গিয়ে।” 

তমাল কেমন থতমত খেয়ে, “কেন সৌমিলি কেন?” বলতে বলতে রনিতা মুখের দিকে চেয়ে লক্ষ্য করে দেখল একটু আগের হাসি মুখটায় এখন কেমন একটা গম্ভীর মেঘের ছায়া, ঠিক শরতের আকাশের মতো, এই রৌদ্রের হাসি তো একটু পরেই হঠাৎ মুখ ভার, তার মুড বোঝে সাধ্যি কার! 

ওদিকে রনিতা বলেই চলেছে, “তখন কত করে ডাকলাম, ইশারা পর্যন্ত করলাম কিন্তু বাবু পাত্তাই দিলেন‌ না, তা এখন কী দরকার? সৌমিলি তাড়িয়ে দিল বুঝি?” 

তমাল এবার হেসে ফেলে বলল, “আরে, ওখানে তখন সবাই ছিল তাই তো…” ফের একটু কিন্তু কিন্তু করে বলল, “আচ্ছা  শোন না, তোকে একটা কথা বলার ছিল।” 

তমালের কিন্তু কিন্তু ভাব দেখে রনিতা ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, “কী?” 

তমাল বলল, “রনি আমার তোকে ভালো লাগে, শুধু ভালো লাগে বললেও পুরোপুরি বলা হয় না। বলা উচিত খুব খুব ভালো লাগে। এই সহজ কথাটা কঠিন উপায়ে তোকে বলার অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু পারিনি। আসলে তুই সামনে আসলেই না কথা গুলোও কেমন খেই হারিয়ে ফেলি, আচ্ছা তোরও আমায় ভালো লাগে? মানে…”—তমাল প্রায় একনিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে রনিতার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। 

রনিতা এতক্ষণ একদৃষ্টে তমালের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো শুনছিল হঠাৎ বলে বসল, “জানিনা”—বলেই উলটো দিকে হাঁটা দিল। 

তমাল কেমন ভ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে রইল। হঠাৎ ঘাড়ে একটা স্পর্শ পেয়ে সজাগ হয়ে উঠল, ঋজু কখন ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সেটা লক্ষ্য করেনি। ঋজু বলল, “কী চাঁদ, এখানে তো অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রনিতার সাথে খোশগল্প হচ্ছিল তার আসল কথাটি কী পেট থেকে বেরোলো?” 

তমাল ঘাড় হেলিয়ে উত্তর দিল “হ্যাঁ, বেরোলো।” 

ঋজু ফের জিজ্ঞেস করল, “তা….কী উত্তর দিল?” 

তমাল ফের একই রকম‌ভাবে ঘাড় হেলিয়ে বলল, “উত্তরটা বড্ড কনফিউসিং, বলল জানি না।” 

ঋজু এবার হেসে ফেললো, “জানি না বলল? তবে তো ঠিকই আছে।” 

তমাল অবাক হয়ে ঋজুর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “ঠিক আছে মানে? ঠিক বুঝলাম না।”

(ক্রমশ)

Author

  • জিৎ সরকার

    নবতরু ই-পত্রিকার একদম জন্মলগ্ন থেকে নিয়মিত লেখালেখির সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন তাঁদের মধ্যে লেখক জিৎ সরকার অন্যতম। ১৯৯৭ সালে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এরপর বাল্যকাল এবং বড়ো হয়ে ওঠা নদীয়ার করিমপুরে। স্থানীয় করিমপুর জগন্নাথ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হয়ে কৃষ্ণনাথ কলেজে জীববিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে করিমপুরেই থাকেন পেশায় ও নেশায় ছাত্র জিৎ সরকার। একই সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন লেখালেখির কাজও। জীববিদ্যাতে প্রথমশ্রেণিতে স্নাতক জিৎ সরকারের শখ প্রধানত লেখালেখি করা তছাড়াও বই পড়া, গান শোনা সিনেমা দেখা, রান্না করা, পুরোনো ইতিহাস ঘাটাঘাটি করা প্রভৃতিতেও উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। তাঁর লেখালেখির জীবন শুরু কবিতা দিয়ে। তারপরেও কিছু কবিতা লেখা হয়েছে। তার মধ্যে কিছু সোস্যাল মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে। দুটি কবিতা দুটি ওয়েব ম্যাগাজিনেও প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখি চলছে সমান তালে। এছাড়া ছবি আঁকা, ক্রিমিনোলজি সর্ম্পকে ধারনা প্রভৃতি বিষয়েও বিশেষ দক্ষ তিনি। তীক্ষ্ণ স্মৃতিধর জিৎ সরকারের লেখায় বুদ্ধিদীপ্তের ছাপ পরে লেখার পরতে পরতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার (১/১২ পর্ব)
গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার

    গাড়িটা যখন বড়ো গেটের সামনে এসে দাঁড়াল তখন শেষ বিকেলের সূর্য পশ্চিমাকাশে রক্তাভা ছড়িয়ে সেদিনকার মতো সন্ধ্যেকে আলিঙ্গন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব): জিৎ সরকার
    গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

    অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব): জিৎ সরকার

      ভিড়টা মোড়ের বাঁকে অদৃশ্য হতেই শ্রী ঘরের দিকে ফিরতে উদ্যত হল, হঠাৎ নীচের দরজায় আওয়াজ উঠল। বাধ্য হয়েই অভিমুখে বদলে শ্রী নীচে এসে দরজা খুলল। দেখল ঋজু দাঁড়িয়ে, মুখে একটা হাসি খেলছে। এই হাসিটা একদিন ফিরে এসে শ্রী কিন্তু লক্ষ্য করেনি

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      ধারাবাহিক গল্প

      অসুর মর্দন(১০ম পর্ব): জিৎ সরকার

        এতক্ষণে তমাল মুখের কঠিন রেখাগুলো অনেকটা সহজ হয়ে এসেছে, সে মৃদু হেসে বলে, “দ্যাখ পারব কি পারব না সেটা তো এখনি বলা যাচ্ছে না, তবে হ্যাঁ, একটা চেষ্টা করে দেখাই যাক, পরেরটা না-হয় পরেই বুঝে‌ নেব।

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন