Recent Post

অসুর মর্দন(১০ম পর্ব): জিৎ সরকার

(আগের পর্বটি পড়ুন)

     “তমালদা বলছি শোনো একটু কথা ছিল।” 

কথাটা শুনে তমাল পেছনে ফিরল, দাঁড়িয়ে আছে রনিতা। সিঁদুর রাঙা মুখটাতে থমথম করছে দশমী। তমাল বেশ একটু তাড়া দেখিয়েই বলল, “কী বলবি তাড়াতাড়ি বল, হাতে একদম সময় নেই।” 

রনিতা মুখের উপর আসা একরাশ অবাধ্য চুলের রাশিকে কানের পাশে সরিয়ে আস্তে আস্তে বলতে শুরু করল, “বলছি কাল রাতে আবার ভেবে দেখলাম জানো। একটা সুযোগ দেওয়াই যায় আমাদের রিলেশনটাকে। খুব বেশি হলে কী হবে, পাপা আমার আর তোমার বিরুদ্ধে যাবে, তোমার বাড়ি থেকেও মানবে না। আমরা বোঝাব, দুজনে মিলে বোঝাব যে আমরা ভুল কিছু করছি না। আমরা বোঝালে ওরা নিশ্চয় বুঝবে। আর তাও যদি না বোঝে তখন নয় দেখা যাবে। আর…আর যদি আমরা নিজেরাই ছড়িয়ে ফেলি, নিজেরাই না-হয় একে অন্যের হাত ধরে সামলে নেব, কি বল পারব না?” 

এতক্ষণে তমাল মুখের কঠিন রেখাগুলো অনেকটা সহজ হয়ে এসেছে, সে মৃদু হেসে বলে, “দ্যাখ পারব কি পারব না সেটা তো এখনি বলা যাচ্ছে না, তবে হ্যাঁ, একটা চেষ্টা করে দেখাই যাক, পরেরটা না-হয় পরেই বুঝে‌ নেব।”

তখন দুপুরে ধীর লয়ে বিকেলের পথে হাঁটা দিয়েছে। মন্ডপে বেদী থেকে ঠাকুর নামানোর প্রিপারেশন চলছে। দোতলার ঘরে শ্রী একা কিছু জিনিসপত্র গোছগাছ করছে। এই সমস্ত গোছগাছের জন্য আজ আর তার যাওয়া হয়ে ওঠেনি। বাড়িটা সে প্রোমোটারকে বিক্রিই কর দেবে এমনটা প্রায় মনস্থির করেই ফেলেছে। শ্রী জানে এখানে ফেরার তার কাছে আর কোনও কারণ নেই, ফিরলেও থাকতে সে পারবে না। তবুও; তবুও একটা চাপা কষ্ট তার মনের মধ্যে দানা বাঁধছে বারবার। তার ছোটোবেলা, বড়োবেলার কিছুটা সে যেখানে কাটিয়েছে, যে জায়গার সঙ্গে তার জীবনে সবথেকে খুশির মুহূর্ত, স্মৃতি জড়িয়ে, যেখান থেকে সে প্রথম স্বপ্ন দেখতে শিখেছে আর সবথেকে বড় যে জায়গায় ফিরলে তার বাবার স্পর্শ, অস্তিত্ব তার মানসে সে এখন অনুভব করতে পারে সে জায়গার উপর আর কিছুদিন পর তার কোনো অধিকার থাকবে না। ভেঙে গুঁড়িয়ে  স্রেফ ধুলো হয়ে রয়ে যাবে। তবুও সে বিক্রি করবে, রাখলে এই জায়গার টান সে এড়াতে পারবে না, বারবার ফিরতে ইচ্ছে হবে। এতদিন যে কী কষ্টে সে জায়গাটা ভুলে ছিল—শুধু একমাত্র সেই জানে। তবে যাওয়ার আগে সে নিজের আর তার বাবার প্রিয় কিছু জিনিস তার সঙ্গে করে নিয়ে যেতে চায়। এই সমস্ত সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কতক্ষণ সময় কেটেছে তার ঠিক খেয়াল নেই। হঠাৎ এই সময় গলিতে একটা কোলাহল শুনতে পেল শ্রী, ক্রমশ এগিয়ে আসছে তাদের বাড়ির দিকে। ঠাকুর রওনা হচ্ছেন ভাসানের উদ্দেশ্যে। সে উঠে এসে দাঁড়াল দোতলার বারান্দাতে। মা যখন তাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছেন তখন দুটো হাত নিজের নাকের সমান্তরালে এনে মাথাটাকে ইষৎ নীচু করে কপালটাকে দু’হাতে আঙুলের অগ্রভাগ স্পর্শ করাল শ্রী। এরপর দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ, যতক্ষন দেখা যায় ভিড়টাকে। বাতাসে তখন বিষাদ ছাপিয়েও একটা অঙ্গীকারের রব উঠছে। আসছে বছর আবার হবে, আসছে বছর আবার হবে…

(ক্রমশ)

Author

  • জিৎ সরকার

    নবতরু ই-পত্রিকার একদম জন্মলগ্ন থেকে নিয়মিত লেখালেখির সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন তাঁদের মধ্যে লেখক জিৎ সরকার অন্যতম। ১৯৯৭ সালে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এরপর বাল্যকাল এবং বড়ো হয়ে ওঠা নদীয়ার করিমপুরে। স্থানীয় করিমপুর জগন্নাথ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হয়ে কৃষ্ণনাথ কলেজে জীববিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে করিমপুরেই থাকেন পেশায় ও নেশায় ছাত্র জিৎ সরকার। একই সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন লেখালেখির কাজও। জীববিদ্যাতে প্রথমশ্রেণিতে স্নাতক জিৎ সরকারের শখ প্রধানত লেখালেখি করা তছাড়াও বই পড়া, গান শোনা সিনেমা দেখা, রান্না করা, পুরোনো ইতিহাস ঘাটাঘাটি করা প্রভৃতিতেও উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। তাঁর লেখালেখির জীবন শুরু কবিতা দিয়ে। তারপরেও কিছু কবিতা লেখা হয়েছে। তার মধ্যে কিছু সোস্যাল মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে। দুটি কবিতা দুটি ওয়েব ম্যাগাজিনেও প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখি চলছে সমান তালে। এছাড়া ছবি আঁকা, ক্রিমিনোলজি সর্ম্পকে ধারনা প্রভৃতি বিষয়েও বিশেষ দক্ষ তিনি। তীক্ষ্ণ স্মৃতিধর জিৎ সরকারের লেখায় বুদ্ধিদীপ্তের ছাপ পরে লেখার পরতে পরতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার (১/১২ পর্ব)
গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার

    গাড়িটা যখন বড়ো গেটের সামনে এসে দাঁড়াল তখন শেষ বিকেলের সূর্য পশ্চিমাকাশে রক্তাভা ছড়িয়ে সেদিনকার মতো সন্ধ্যেকে আলিঙ্গন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব): জিৎ সরকার
    গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

    অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব): জিৎ সরকার

      ভিড়টা মোড়ের বাঁকে অদৃশ্য হতেই শ্রী ঘরের দিকে ফিরতে উদ্যত হল, হঠাৎ নীচের দরজায় আওয়াজ উঠল। বাধ্য হয়েই অভিমুখে বদলে শ্রী নীচে এসে দরজা খুলল। দেখল ঋজু দাঁড়িয়ে, মুখে একটা হাসি খেলছে। এই হাসিটা একদিন ফিরে এসে শ্রী কিন্তু লক্ষ্য করেনি

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      ধারাবাহিক গল্প

      অসুর মর্দন(৯ম পর্ব): জিৎ সরকার

        ঋজুকে আর একটাও কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ফিরে চলল শ্রী। ঋজু চেয়ে রইল কিছুক্ষন, তারপর কানে একটা “ওই ঋজু একা ওদিকে কি করছিস? এদিকে আয়”— ডাক পৌঁছাতেই ঋজু পায়ে পায়ে  আনন্দমুখর কোলাহলের দিকে এগিয়ে গেল।

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন