Recent Post

অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব): জিৎ সরকার

 অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব):
জিৎ সরকার
 অসুর মর্দন(একাদশ পর্ব): জিৎ সরকার
 (আগের পর্বটি পড়ুন)

               
ভিড়টা মোড়ের বাঁকে অদৃশ্য হতেই শ্রী ঘরের দিকে ফিরতে উদ্যত হল, হঠাৎ নীচের দরজায় আওয়াজ উঠল। বাধ্য হয়েই অভিমুখে বদলে শ্রী নীচে এসে দরজা খুলল। দেখল ঋজু দাঁড়িয়ে, মুখে একটা হাসি খেলছে। এই হাসিটা একদিন ফিরে এসে শ্রী কিন্তু লক্ষ্য করেনি। কোনও রকমের ভূমিকা না করেই ঋজু বলল, “এই তোর আর্ট অ্যাকাডেমি শুরু করার জন্য কী কী লাগবে বলতো? আমি তো এসব ব্যাপার ঠিক জানি না, তুই একটা মিনিমাম লিষ্ট বানিয়ে ফেল কাল পরশুর মধ্যেই জোগাড় করার ব্যবস্থা করছি।”
 কথাগুলো প্রায় একনিঃশ্বাসে বলে গেল ঋজু। প্রস্তাব শুনে কয়েক সেকেন্ড হাঁ-করে চেয়ে রইল শ্রী, তারপর পরই চমক কাটিয়ে বলে উঠল “মানে?” 
ঋজু ফের বলতে লাগল “দ্যাখ, ওসব মানে টানে পরে বোঝাব, আর হ্যাঁ, তোদের নীচের দুটো ঘর তো বেশ বড়োই আর ও দুটো তো ফাঁকাই থাকে। আমি কালই পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করছি, মাঝের পার্টিশন ওয়াল ভেঙে ওখানেই আপতত শুরু করা যাক।”

 প্রায় ঋজুর কথার মধ্যে কথাটা দিয়েই শ্রী বলল, “দ্যাখ ঋজু, এসব পাগলামো না করিস না, শুধু শুধু তুই ঝামেলায় জড়াবি। আর আমার সাথে তোর নাম জড়ালে তোর, তোর বাড়ির সামাজিক স্টেটাসের পক্ষে সেটা খুব একটা ভালো হবে না। তার থেকে কাল আমি তো চলেই যাচ্ছি, তারপর দেখবি সব আবার আগের মতো শান্ত হয়ে যাবে।" 
এবার স্বরে একটা জেদি ভাব ফুটিয়ে ঋজু বলল, “তোর কথার জবাবগুলো একে একে দিই। প্রথমত, আমার মধ্যে একটু পাগলামো চিরকালই আছে। সেটা তুই জানিসও, কয়েক বছর ওটাকে একটু চাপা রেখেছিলাম তবে এখন বুঝছি ওটা ছাড়া লাইফ বড্ড বোরিং। দ্বিতীয়ত, তোকে নিয়ে ঝামেলা আমি আগেও অনেকবার সহ্য করেছি, তুই হয়তো ভুলে গেছিস অন্যদিন বসে না হয় মনে করাব। আর স্টেস্টাসের ব্যাপারটা আমার হাতেই ছাড়, ওটা না হয় আমিই সামলে নেব। আর তৃতীয়ত, কাল যে তুই বলছিলি ফেরার কোনও কারণ নেই, তোকে সেই কারণটা দিচ্ছি। আর যে অসুরগুলো এখন মানুষের মনে বাঁচে তাদের বিরুদ্ধে লড়াইটা কোথাও থেকে একটা শুরু তো করতে হবে, ধরে নে এটাই সেটা।” তারপর একটু দম নিয়ে ফের বলল, “তুই থাক আর নাই থাক, এটা আমি করবই, আর এ-বাড়িতেই করব এবার এটা তুই ঠিক কর এখানে থেকে লড়াই করবি না ফের সব ছেড়ে যাবি। তবে কথা দিচ্ছি তুই যদি থাকিস আমিও তোর পাশে থাকব। এখন ভাব, আমি আসার পথে আবার ঢুঁ-মারব, তখন উত্তরটা শুনে নেব। এখন যাই নইলে ওদের আবার ধরতে পারব না, ভাসানটা মিস করে যেতে পারি।" 
শ্রীকে আর একটা কিচ্ছু বলার সুযোগ না দিয়েই রাস্তায় নেমে প্রায় ছুটতে শুরু করল ঋজু। শ্রী তখনো বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে, কেমন অবাক, নিশ্চল।
   
আজ দশমী। দশমী মানে বিষাদ নয় বরং বিষাদগুলোকে মায়ের আঁচলের গিঁটে  বেঁধে জলে ভাসিয়ে দিয়ে একটা প্রমিস— একটা প্রতিশ্রুতি। একটা তমাল একটা রনিতা, একটা ঋজু একটা শ্রী, আর তাদের করা একটা প্রতিশ্রুতি। প্রতিশ্রুতি পাশে থাকার পাশে রাখার। প্রতিশ্রুতি সবাইকে নিয়ে হাসিমুখে বাঁচার। প্রতিশ্রুতি যে সব কাছের মানুষগুলো অনেকটা দূরে চলে গেছে, সব দূরত্ব ঘুচিয়ে, সব ভুল ভাঙিয়ে আর সব অন্যায়কে ক্ষমা করে আরও একবার তাদের হাতটা ধরার। প্রতিশ্রুতি নিজেদের মধ্যে বাঁচতে থাকা কিছু জীর্ণ ধারনা, কিছু অসুরকে বধ করে সামনের বছর বাপের বাড়ি ফেরত মেয়েকে আজকের থেকেও একটা সুন্দর পৃথিবী উপহার দেওয়ার। আরও একটা প্রতিশ্রুতি, আসছে বছর আবার হবে…
(সমাপ্ত)

Author

  • জিৎ সরকার

    নবতরু ই-পত্রিকার একদম জন্মলগ্ন থেকে নিয়মিত লেখালেখির সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন তাঁদের মধ্যে লেখক জিৎ সরকার অন্যতম। ১৯৯৭ সালে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। এরপর বাল্যকাল এবং বড়ো হয়ে ওঠা নদীয়ার করিমপুরে। স্থানীয় করিমপুর জগন্নাথ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হয়ে কৃষ্ণনাথ কলেজে জীববিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে করিমপুরেই থাকেন পেশায় ও নেশায় ছাত্র জিৎ সরকার। একই সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছেন লেখালেখির কাজও। জীববিদ্যাতে প্রথমশ্রেণিতে স্নাতক জিৎ সরকারের শখ প্রধানত লেখালেখি করা তছাড়াও বই পড়া, গান শোনা সিনেমা দেখা, রান্না করা, পুরোনো ইতিহাস ঘাটাঘাটি করা প্রভৃতিতেও উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। তাঁর লেখালেখির জীবন শুরু কবিতা দিয়ে। তারপরেও কিছু কবিতা লেখা হয়েছে। তার মধ্যে কিছু সোস্যাল মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে। দুটি কবিতা দুটি ওয়েব ম্যাগাজিনেও প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখি চলছে সমান তালে। এছাড়া ছবি আঁকা, ক্রিমিনোলজি সর্ম্পকে ধারনা প্রভৃতি বিষয়েও বিশেষ দক্ষ তিনি। তীক্ষ্ণ স্মৃতিধর জিৎ সরকারের লেখায় বুদ্ধিদীপ্তের ছাপ পরে লেখার পরতে পরতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার (১/১২ পর্ব)
গদ্য- সাহিত্য গল্প ধারাবাহিক গল্প

আয়নাবন্দি: জিৎ সরকার

    গাড়িটা যখন বড়ো গেটের সামনে এসে দাঁড়াল তখন শেষ বিকেলের সূর্য পশ্চিমাকাশে রক্তাভা ছড়িয়ে সেদিনকার মতো সন্ধ্যেকে আলিঙ্গন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

    বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
    শৈশবের গরমকাল: ঈশিতা পাল
    গদ্য- সাহিত্য স্মৃতিকথা

    শৈশবের গরমকাল: ঈশিতা পাল

      আমার শৈশব ভাড়াবাড়িতে। তাই গরমের ছুটিতে কাকু, জেঠুদের বাড়ি টানা একমাস ছুটি কাটাতে যেতাম। মামাবাড়িও যেতাম। ছেলেবেলার গরমকাল জুড়ে বেশ কিছু মজার স্মৃতি আছে

      বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন
      চাদিফাঁটা আমার সেকাল: বন্দে বন্দিশ
      গদ্য- সাহিত্য স্মৃতিকথা

      চাঁদিফাটা আমার সেকাল: বন্দে বন্দিশ

        মনে পড়ে যায় ছেলেবেলার সেইসব দিন, প্রচন্ড গরম থেকে স্বস্থির আরাম

        বিশদে পড়তে এখানে ক্লিক করুন