ফোনটাই হয়েছে কাল! না আর ভাবার সময় নেই, পরীক্ষার দুটো ঘন্টা পার হয়ে গেল কিন্তু ইতিহাসের যা উত্তর দিয়েছে তাতে মেরে কুটে পঁচিশ হতে পারে। নীলিমা তাড়াতাড়ি করে বাকি প্রশ্নের উত্তর লিখতে লাগল।
নীলিমা বরাবরই ক্লাসের মেধাবী ছাত্রী। লকডাউনের আগে পর্যন্ত পড়াশোনায় নীলিমার নাম গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছিল। বাবা ছোট মুদিখানা দোকান চালায়। বাবার স্বপ্ন নীলিমাকে নিয়ে।
ছোট ছেলে জন্ম থেকেই বিকলাঙ্গ। স্কুলের স্যরদের নজর নীলিমার পড়াশোনার প্রতি আছে। বেশ ভালোই চলছিল। হঠাৎ করে করোনা এসে যাওয়ায় পড়াশোনা অনলাইনে করতে লাগল সবাই। নীলিমা পিছিয়ে পড়তে লাগল।
বাবার দোকানের যা অবস্থা তাতে ফোন কেনার সামর্থ্য নেই। মডেল আক্টিভিটি টাস্ক বন্ধুরা সবাই ফোনে দেখে লিখে জমা দিতে থাকে। নীলিমা বন্ধুদের লেখা শেষ হয়ে যাবার পর শেষ মুহূর্তে জমা দেয়। তারপর মামা দিল্লি থেকে বাড়ি এসে একমাত্র ভাগ্নির জন্য একটা ফোন কিনে দেয়। মামা জুয়েলারি কাজে দিল্লিতে থাকে।

নীলিমাকে বারবার করে বলে দিয়েছে ফোনটা যেন শুধু পড়াশোনা কাজেই ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু কে শোনে কার কথা। দিনরাত ছোট ছোট গানের ভিডিও করে সোস্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে তার। মা খুব বকাঝকা করত কিন্তু নীলিমা মাকে আড়াল করেই এসব করত। ফলে, ফোনের প্রতি ঝোঁক বাড়তেই থাকে।
পরীক্ষায় আজ টেনশন অনুভব করছে নীলিমা। ইতিহাসের শিক্ষক কৃষ্ণস্যর বারবার খুঁটিয়ে পড়তে বলতেন সবাই কে। ইতিহাসের প্রশ্নের ধরন পরিবর্তন হয়েছে।
যে যত বইটা খুঁটিয়ে পড়ে বুঝতে পারবে তার তত ভালো রেজাল্ট হবে। আর বেশি ক্ষণ সময় নেই হাতে। আঙুলগুলো ঘেমে পেনটা শুধু পিচ্ছিল খাচ্ছে। পড়াশোনার প্রতি অবহেলা শিরায় শিরায় অনুভব করে নীলিমা।
পরীক্ষা হলের জানলা দিয়ে মায়ের বকাঝকার কথা মনে পড়ে। নীলিমা চোখ সরিয়ে খাতার দিকে ফেরায়..